আজ বুধবার, ২৪শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চাঁদাবাজিও করে দুলাল প্রধান !

সংবাদচর্চা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সেক্রেটারী সাইফউদ্দিন আহমেদ দুলাল প্রধানকে ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তারের পর প্রভাবশালী একটি মহল ছাড়াতে চেষ্টা করেছিলো। তারা রাতভর তদবির করলেও পুলিশ তা আমলে নেয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, এ তদবিরকারীরা কারা ? তারাও কি মাদক ব্যবসায় জড়িত ? এদিকে দুলাল প্রধানের বিরুদ্ধে জমি দখল, প্রভাব বিস্তার ও চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে। বন্দরের কয়েকটি এলাকায় তার প্রভাব বিস্তারের কথা এখন মানুষের মুখে মুখে। উল্লেখ্য, দুলাল প্রধান শামীম ওসমানের খাস লোক হিসেবে পরিচিত।

২৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে মানসিক প্রতিবন্দী ছোট ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে ৬৫ বছর বয়সী বিধবা ফরিদা বেগম অভিযোগ করেন, নাসিক ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহমেদ দুলাল প্রধান তাদের সম্পত্তি নিতে নানাভাবে হুমকি ধামকি দেয়। অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও নানাভাবে হয়রাণি করে তার লোকজন। জমি সম্পর্কিত ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের আদালতে একটি মামলা করা হয়। মামলা নম্বর দেওয়ানী কার্যবীদী ৯২ / ২০১৮।

সূত্র মতে, দুলাল প্রধানসহ কর্মীরা ৫ নং ঘাটের পূর্ব পাড়ে একরামপুর এলাকা দিয়ে অবৈধ ভাবে তেল চুরিতে জড়িত। শুধু মাত্র ২৩ নং ওয়ার্ড নয় বন্দর উপজেলা জুড়েই তার প্রভাব রয়েছে। বন্দরের নবীগঞ্জ, বাগবাড়ি, রেললাইন, ছালেহনগর, বাবুপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় জমি কিনতে হলে দুলাল প্রধান ও তার সহযোগীদের চাঁদা দিতে হয়। দুলালের চেলামুন্ডারা চাঁদা দিতে হুমকি দেয়। এ নিয়ে তার কাছে কেউ শালিশ দিলে সে তখন বলে, ওরা আমার লোক না। নাম না প্রকাশ করার শর্তে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা জানান, দুলাল শুধু মাদক বিক্রির সাথে জড়িত নয়। সে মাদক সেবনও করে। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কতিপয় শীর্ষ নেতাও মাদক সেবন করে বলে জানান তিনি। সম্প্রতি স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানেও দুলালের সঙ্গে অনেক মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবীদের দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শহরের নবীগঞ্জ খেয়াঘাট এলাকা থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি টিম সহযোগী ৬জনসহ কাউন্সিলর দুলাল প্রধানকে গ্রেপ্তার করে। সহযোগীরা হলেন, কামাল হাসান (৪৭), মনির হোসেন মনু (৫০), তানভীর আহম্মেদ সোহেল(৪১) এবং মো. মজিবর রহমান (৫২)। প্রত্যেকেই দুলাল প্রধানের সহযোগি মাদক ব্যবসায়ী, জানিয়েছে পুলিশ। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে ৫০ বোতর ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়।

এদিকে গতকাল নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রেরিত বার্তায় জানানো হয়েছে, ডিবি পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক কাউন্সিলর দুলাল প্রধান স্বীকার করে জানিয়েছেন, তিনি জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক প্রভাবে দীর্ঘ দিন ধরে ফেনসিডিল ব্যবসা চালিয়ে আসছেন।

ডিবি পুলিশের একটি সূত্র জানায়, কাউন্সিলর দুলাল প্রধানকে ছাড়ানোর জন্য ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন রাতভর তদবির চালান। মধ্যে একজন সংসদ সদস্যও ছিলেন। তিনি দুলালকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য সরাসরি পুলিশ সুপারের সাথেই কথা বলেন। এনিয়ে বেশ কিছুক্ষণ তর্কও হয়। তবে, পুলিশ সুপার জানিয়ে দিয়েছেন, মাদকসহ হাতেনাতে আটক করা হয়েছে। ছাড়া সম্ভব নয়। আদালত থেকে জামিনের ব্যবস্থা করেন। মামলা রেকর্ড হয়ে গেছে। পুলিশ গতকাল দুপুরে কাউন্সিলর দুলাল প্রধানকে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করেছে। রোববার আদালত রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেছেন।

এদিকে পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় জানিয়েছেন, মাদকের সাথে কোনো আপস নাই। অপরাধী যেই হোক না কেন, অপরাধ করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে

সর্বশেষ সংবাদ